ঢাকা,শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪

মহাবিপন্ন প্রাণীদের তালিকায় রয়েল বেঙ্গল টাইগার

মো. সাইফুল ইসলাম খোকন, চকরিয়া :: বাঘ সাধারণত দেখতে বড়ো বিড়াল জাতের অন্তর্ভুক্ত একটি স্তন্যপায়ী প্রাণী। বাঘকে ইংরাজিতে বলা হয় রয়েল বেঙ্গল টাইগার। ফেলিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত সবচেয়ে বড় প্রাণী। পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার অনেক এলাকায় একে দেখা যায়। বাঘের বিভিন্ন চারিত্রিক সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য আপনাদের জানাবো।

বাঘের পা খুব নমনীয় হয় তাই, বাঘেরা চলাফেরা করার সময় সামান্য শব্দ করেনা। অন্য কোনও জন্তু বা মানুষের চলাফেরা এরা সহজে বুঝতে পারে।এদের ধারালো নখ শিকার করার আগে ভেতরে থাকে। বাঘের জোরালো চোয়াল আর ধারালো শ্বদন্ত দাঁত থাকে। এদের ক্যানাইন দাঁত ৪ ইঞ্চি পর্যন্ত লম্বা হয় । বাঘ খুব বুদ্ধিমান প্রানী। এরা খুব সহজেই বুঝতেও পারে। সরকারের অনুমতি নিয়ে অনেকে এদের সার্কাস এর জন্য প্রশিক্ষণ দিয়ে দর্শনার্থীদের আকর্ষণ করে থাকে।

বর্তমানে বাঘ (রয়েল বেঙ্গল টাইগার) এখন মহা-বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। এর পাশাপাশি হাতি, ভোঁদড়, লামচিতা, চিতা, বনরুই, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, বনগরু, সাম্বার হরিণ, প্যারাইল্লা বানর, হিমালয়ান ডোরা কাঠবিড়ালি ও কালো ভালুক। শিকারীরা প্রতিনিয়ত বাঘসহ নানা বন্যপ্রাণী শিকার করে যাচ্ছে। যা আইনগত নিষিদ্ধ।

কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার ডুলাহাজারা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সাফারী পার্কের সহকারী তথ্যাবধায়ক মো. মাজাহারুল ইসলাম চৌধুরী বলেন, বাঘদের দর্শন শক্তি ও শ্রবণ শক্তি প্রখর হয়। চোখের রেটিনার মধ্যে ট্যাপেটাম লুসিডাম কোষের জন্য রাতের অল্প আলোতে ভাল দেখতে পায়। বাঘ রাতেই বেশি শিকার করে । বাঘ যতটা সম্ভব শিকারের কাছে কাছে থাকে । তারপর সুযোগ বুঝে তাড়া করে বা পিছন দিক থেক শিকারের কাঁধে বা গলায় কামড়ে ধরে । শিকার দমবন্ধ হয়ে না মরা পর্যন্ত বাঘ গলা আঁকড়ে ধরেই থাকে। এরা নিজেদের থেকে বড়ো প্রাণী শিকার করতে পারে। এদের খাবার থাকলেও শিকার হাতছাড়া করেনা। খাবার বেশি হলে সেগুলি জমিয়ে রাখে, পাহারা দেয়। শিকারের প্রয়োজনে এরা জলে সাঁতার কাটতে বা গাছে চড়তে পারে। সাম্বার হরিণ ও শুয়োরের মাংস বাঘদের প্রিয় খাদ্য। আবার বাচ্চা ও বয়স্ক বাঘদের সব সময় শিকার জোটেনা। বাঘেরা তাদের নিজের এলাকায় থাকতে বেশি পছন্দ করে। যদি অন্য কোনও বাঘ তাঁর এলাকায় ঢুকে পড়ে তখন দুজনের লড়াই হয় । বাঘেরা মূত্রনালি থেকে বেরনো তরল দিয়ে মাটিতে ও গাছে ছিটিয়ে তাঁর এলাকা চিহ্নিত করে রাখে । আবার অনেক সময় গাছে আঁচড় কেটে বা দাগ দিয়ে থাকে। গন্ধ শুকে বাঘ ও বাঘিনী একে অপরকে খুঁজে নেয় । বড়ো বাঘেরা সাধারণত একা একা থাকে। জননের সময় বাঘিনীর সাথে মিলিত হয় । বাঘের মিলন বছরের যেকোন সময় হতে পারে । তবে নভেম্বর-এপ্রিলের মধ্যেই সর্বাধিক মিলন ঘটে । তিনি আরো জানান, বাঘ বাচ্চা পালনের সময় সবথেকে বেশি হিংস্র হয়ে ওঠে। বাচ্চা জন্মানোর আগে একটি পরিষ্কার জায়গা নির্বাচন করে। এরপর সারাদিন ধরে বাচ্চাদের পাহারা দেয়। নিজেদের খাওয়ার সময় তখন এরা ঠিক মত সময় পায়না। বাচ্চারা একটু বড়ো হলে মা বাঘ তাদের শিকার করা শেখায়। প্রথমে কোন শিকার করা প্রাণীর এনে তার মাংস ছিঁড়ে ছিঁড়ে খেতে দেয় । পরে আধমরা প্রাণী এনে তার মাংস ছিঁড়ে খেতে শেখায় । দাঁতের সাহায্যে মাংস কিভাবে ছিঁড়ে খেতে হয় তাও শেখায় । বাঘেরা তাদের বাচ্চাদের নদীতে সাঁতার শেখাতে নিয়ে যায় । বাচ্চারা ২ বছর বয়স পর্যন্ত মায়ের সাথে থাকে । বাঘের বাসা বদলের সময় অনেক মানুষ বাঘের আক্রমণের জন্য মারা যায় । কারণ তারা বাচ্চাদের কাছে সহজে কাউকে আসতে দেয়না। সুন্দরবন এলাকায় বাঘ মাঝে মাঝেই লোকালয়ে ঢুকে পড়ে । এদের ধরে আবার বনে ছেড়ে দেওয়া হয়। সুন্দরবন অঞ্চলে বাঘ সংরক্ষণের চেষ্টা চলছে।

চট্টগ্রাম বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আবু নাসের মো: ইয়াছিন নেওয়াজ বলেন, বনে প্রবেশ করে যারা বসতি স্থাপন করেছে তা অবৈধ। বনে বিচরণরত সকল প্রাণী এখন মহাবিপন্ন হয়ে পড়েছে। খাদ্য,আবাসস্থলের সমস্যা সৃষ্টি হয়ে হচ্ছে। লোকালয়ে ঢুকে পড়েছে প্রাণীরা। তাদের হত্যা করা আইনগত অপরাধ। কেউ হাতি-বাঘ-কুমিরের হাতে মৃত্যু আহত কিংবা ফসলের ক্ষতি হলে সরকার তার ক্ষতিপূরণ দিচ্ছে। বর্তমানে বাঘ (রয়েল বেঙ্গল টাইগার) এখন মহা-বিপন্ন প্রাণীর তালিকায় রয়েছে। এর পাশাপাশি হাতি, ভোঁদড়, লামচিতা, চিতা, বনরুই, উল্লুক, চশমা পরা হনুমান, বনগরু, সাম্বার হরিণ, প্যারাইল্লা বানর, হিমালয়ান ডোরা কাঠবিড়ালি ও কালো ভালুকসহ বেশ কিছু প্রাণী। তাদের সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য প্রত্যেক মানুষকে এগিয়ে আসা দরকার।

 

পাঠকের মতামত: